Online Streaming Vs TV Telecast: বিনোদনে টিভিই শেষ কথা, প্রকৃত গণমাধ্যমও

Online Streaming Vs TV Telecast: 

বিনোদনে টিভিই শেষ কথা, প্রকৃত গণমাধ্যমও



সে একটা সময় ছিল। রবিবার ন’টা বাজলেই রাস্তাঘাট শুনশান। যেন গাছের পাতা নড়াও থমকে যেত। কারণ, এর পরের এক ঘণ্টা ধরে সাদা কালো টিভি সেটে ফুটে উঠত রামায়ণ-মহাভারত। অরুণ গভীল, দীপিকা চিখালিয়া, নীতিশ ভরদ্বাজরা তখন আর মানুষ নন, পৌরাণিক চরিত্র। হেঁটে চলা রাম-সীতা, কৃষ্ণকে দেখতে পেয়ে টিভি সেটকে মালা পরিয়ে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে পুজোর ঘটনা ঘটত হামেশাই। টিভি (TV) সেটই যেন মন্দির। সেখানে বাস করেন আরাধ্য দেবতা। তফাৎ একটাই, সে দেবতা হাঁটা চলা করেন। ছোটবেলায় ধারণা ছিল, রূপকথার সাম্রাজ্য বুঝি বা সাদা কালো। আলিফ লায়লায় আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের ধোঁওয়ার মতোই সে জগৎ মায়াময়। আজকের নেটফ্লিক্স, এমএক্স প্লেয়ার, ভুট, অলট বালাজি বা হইচই দেখা প্রজন্ম ধারণাও করতে পারবে না গত শতকের আটের দশকের শেষ আর নয়ের দশকের প্রথম দিকের সেই সাদা-কালোয় রোমাঞ্চে ভরা কৈশোরের কথা। 



কালে কালে কত কিছুর বদল ঘটেছে। পাঁচ কাঠির অ্যালুমিনিয়ামের অ্যান্টেনা ছেড়ে কেবল হয়ে ডিটিএইচ। একমাত্র দূরদর্শন থেকে হাজার একটা চ্যানেল। তবু টিভি দেখার উৎসাহে ভাঁটা পড়েনি এতটুকু। কোথায় লাগে অ্যাপ ভিত্তিক  অনলাইন স্ট্রিমিং (online Streaming) বিনোদন। তবু সময়ের দাবি মেনে, প্রযুক্তির হাত ধরে একের পর এক অ্যাপ হাজির হচ্ছে বিনোদনের পসরা নিয়ে। তাহলে কী চিরাচরিত বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে হারিয়ে যাবে টিভি? যখনই নতুন কোনও বিকল্প আসে, তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। আর নতুনত্বে মজে অনেক বিশেষজ্ঞই পুরনোর বিদায় ঘণ্টি বাজিয়ে দেন। তবে ইতিহাস বলে, বিষয়টি এত সহজ নয়। ক্যারি প্যাকার যখন একদিনের ক্রিকেট শুরু করেন, তখনও বলা হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটের মৃত্যু অনিবার্য। কী আশ্চর্য, পঞ্চাশ বছর কেটে গেলেও টেস্ট ক্রিকেট বহাল তবিয়তে তার কৌলিন্য নিয়ে। কোনও ক্রিকেটারের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড এখনও সেই টেস্ট ক্রিকেটের সাফল্য। 

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় থেকেই টিভি শোওয়ার ঘরে পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছে। উপসাগরীয় যুদ্ধের লাইভ সম্প্রচার টিভিকে করে তুলেছে মহিমময়। আর তাতে উজ্জীবিত হয়ে অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন, লিখিয়েদের দিন শেষ, এখন ধারাভাষ্যকারদের যুগ শুরু। খবরের কাগজকে কটাক্ষ করেই যে এমন মন্তব্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এরপর কেটে গিয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর। খবরের কাগজের বিক্রি শুধু বাড়েনি, বিশ্বাসযোগ্যতার সমার্থক হয়ে উঠেছে। টিভিতে কোনও খবরের বিস্তারিত জানতে সকালের খবরের কাগজ গোগ্রাসে গেলেন পাঠক। আসলে খবরের কাগজ, টিভি বা অ্যাপের সম্পর্ক সরল রৈখিক নয় যে, একটির প্রচার বাড়লে অপরটির সঙ্কট ঘনিয়ে উঠবে। এই তিন বিনোদন মাধ্যমের সম্পর্ক বহু মাত্রিক। তাই একটির বৃদ্ধি ঘটতে পারে অপরের ক্ষতি ব্যতিরেকে। তাছাড়া টিভির কিছু সুবিধা রয়েছে, যা অ্যাপের থেকে তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। 

প্রথমত টিভি প্রকৃত অর্থেই একটি গণ মাধ্যম। একসঙ্গে বহু মানুষ একই কনটেন্ট দেখে বিনোদনের আনন্দ পান। অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের সেই সুবিধা কোথায়? সেখানে বহু কনটেন্ট থাকলেও, দর্শক-শ্রোতারা নিজেদের পছন্দ মতো বিষয় দেখেন। মোবাইল হ্যান্ডসেটে নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা হয়তো পাওয়া যায়, কিন্তু দর্শক হিসেবে যে কেউ প্রান্তিক হয়ে ওঠেন। একজনের সঙ্গে অপরের পছন্দ না মেলায়, জন পরিসরে আলোচনায় বিষয় পাওয়া যায় না। অথচ, সেই কবে ছয়ের দশকে গণ মাধ্যমের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন মার্শাল ম্যাকলুহন। বিদ্যুতিন মাধ্যম ব্যবহার করে এই পৃথিবী  হয়ে উঠবে ভুবন পল্লী— গ্লোবাল ভিলেজ। জানিয়ে দিয়েছিলেন মিডিয়া গুরু। তাই অ্যাপ কখনও গণ মাধ্যম হয়ে উঠবে না। অগত্যা টিভিই ভরসা। এখন আর টিভি দেখার জন্য বাড়িতে বসে থাকার দরকার নেই। প্রযুক্তির হাত ধরে টিভি এখন স্মার্ট ফোনেও দেখা যায়। দর্শকও সেই স্বাধীনতা উপভোগ করছেন তারিয়ে তারিয়ে। হটস্টার, এয়ারটেল টিভি বা জিও টিভির মাধ্যমে প্রতিদিন টিভি দেখেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। টিভির দর্শকদের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেই ভারতে চালু হয়েছে ‘পে অ্যাজ ইউ উইস’ ব্যবস্থা। নিজের পছন্দের চ্যানেলই কেবল টিভিতে দেখতে পারেন দর্শক। সব মিলিয়ে বদলে যাওয়া সময়ের সঙ্গে বদল ঘটছে টিভির বিনোদনের। 

নেটফ্লিক্সের মতো সংস্থাকে বিনোদনের  কুলীন সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠা দেওয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সেই দলেই পড়েন তিনবারের অস্কার পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক স্টিভন স্পিলবার্গ। বস্তুত, নেটফ্লিক্স প্রযোজিত সিনেমা যাতে অস্কারের মনোনয়ন না পায়, তিনি তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সমানে। সিনেমা বুড়োর যুক্তি খুব পরিষ্কার— যে ম্যুভি হলের মুখই দেখল না, তাকে সফল বলা যায় কি করে? দর্শকের কষ্টি পাথরে যাচাই হোক ভালোমন্দ। চিরন্তনী বিনোদনের সেটাই শেষ কথা। আর এখানেই অনলাইন স্ট্রিমিংকে বলে বলে গোল দিচ্ছে টিভির অনুষ্ঠান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ