World Malaria Day | Kolkata Shares Success: বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস| মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরিক কলকাতা

World Malaria Day | Kolkata Shares Success: বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস| মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরিক কলকাতা

World-Malaria-Day-Kolkata-Shares-Sucess


আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস (World Malaria Day)। ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরিক এই কলকাতাও (Kolakata)। কীভাবে? জানতে একটু পিছনে তাকাতে হবে। সামনে আসবে স্যর রোনাল্ড রসের (Sir Ronald Ross) কথাও। এই কলকাতাতে বসেই ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করে ১৯০২ সালে নোবেল পুরস্কার (Nobel Prize for Physiology or Medicine) পেয়েছিলেন রস। মনে রাখতে হবে, কলকাতা তথা ভারতের সঙ্গে জড়িত সেটাই প্রথম নোবেল । একই সঙ্গে তিনিই প্রথম ব্রিটিশ নোবেল পুরস্কার প্রাপক।

ঔপনিবেশিক ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের আলমোরায় ১৮৫৭ সালের ১৩ মে জন্ম রোনাল্ড রসের। অল্প বয়স থেকেই সঙ্গীত, কবিতা, সাহিত্য এবং অঙ্কে দারুণ আগ্রহ রসের। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই অর্বস অব হেভেন (Orbs of Heaven) নামে অঙ্কের বই লিখে তাক লাগিয়ে দেন। এর জন্য তিনি একটি পুরস্কার পান। মাত্র ১৬ বছর বয়সে অক্সফোর্ড এবং কেম্ব্রিজের স্থানীয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম হন। তবে তিনি সাহিত্যিক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবা তাঁকে জোর করে ভর্তি করে দেন লন্ডনের সেন্ট বার্থালোমিউ হসপিটাল মেডিক্যাল কলেজে। ভাগ্যিস করেছিলেন! না হলে আমরা পেতাম না ম্যালিরিয়ার এই গবেষককে।

জোর করে ভর্তি না হয়, হল। পড়ছে কে! মেডিক্যাল কলেজের দিনগুলিতে সাহিত্য, গান নিয়ে দিব্য মজে রইলেন রস। সঙ্গে যোগ হল সাহিত্য রচনা। তবে পরীক্ষায় পাসের পর আর্মি মেডিক্যাল স্কুলে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নেন। ১৮৮১ সালে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসের একজন সার্জেন হিসেবে যোগ দেন। ১৮৮৪ সালে তাঁর জীবনে একটা বড় পরিবর্তন আসে। সে সময় তিনি বেঙ্গালুরুতে কর্তরত। লক্ষ্য করেন, জল জমতে না দিলে মশার উপদ্রব কমে। আর সে সময় ম্যালিরয়ায় কাবু গোটা বিশ্ব। ততদিনে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে মশার সঙ্গে ম্যালেরিয়ার যোগ রয়েছে। সে সময় কয়েকদিনের জন্য লন্ডন যান তিনি। তাঁর গুরু স্যর পেট্রিক মেনসন তাঁকে ম্যালেরিয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে বলেন। গুরুর কথা ফেলতে পারেননি তিনি। 

World-Malaria-Day-Kolkata-Shares-Sucess


এরপর নানা জায়গা ঘুরে ১৮৯৭ সালে আসেন সেকেন্দ্রাবাদ। সেখানে বসেই তিনি গবেষণা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। মশার পাকস্থলিতেই যে ম্যালেরিয়ার পরজীবীর বংশবৃদ্ধি হয়, তা নিয়ে নিঃসন্দেহ হন তিনি। তাঁর এই গবেষণার রিপোর্ট দ্য ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেটে প্রকাশিত হয় ১৮৯৭ সালের ২৭ আগস্ট। ওই বছরের ডিসেম্বর সংখ্যায় ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাসিথ হয় রসের গবেষণাপত্র। আনন্দে সেই দিন সন্ধ্যায় একটি কবিতা লিখে ফেলেন তিনি। আর তা পাঠিয়ে দেন স্ত্রীকে। 

পড়ুন ম্যালেরিয়া গবেষণায় সাফল্যের পর রসের লেখা কবিতা (Read the poem composed Sir Ronald Ross)। 

‘এই দিন ঈশ্বরের কিছুটা অনুশোচনা হল।

তিনি আমার হাতের মধ্যে হাত রাখলেন।

ঈশ্বরের প্রশংসা, একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা

তাঁর নির্দেশে, তাঁর গোপন কাজ খোঁজা শুরু হল

অশ্রু এবং কঠিন নিঃশ্বাসে,

আমি কোটি কোটি খুনের কারণ 

ধূর্ত সেই বীজ খুঁজে পাই।

এটা সামান্য জিনিস, তা জানি। 

এটি অগণিত মানুষকে রক্ষা করবে।’

আরও লিখলেন

‘হে মৃত্যু, তোমার হুল কোথায়?

হে কবর, তোমার জয় আর হবে?’

World-Malaria-Day-Kolkata-Shares-Sucess


কলকাতা পর্ব এবং রোনাল্ড রসের নোবেল প্রাপ্তি (Roanlad Ross Came to Klakata| Won Noble)। 

১৮৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রস পা রাখলেন কলকাতায়। প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতালে তিনি কাজ শুরু করলেন। তাঁর কাজের ক্ষেত্র ম্যালেরিয়া এবং কালাজ্বর। কাজের সুবিধার জন্য মহানন্দা গ্রামে তিনি একটি ল্যাবরেটরি বানালেন। সেখানে তিনি গ্রামের ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতেন। সেকেন্দ্রাবাদে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন কীভাবে মশার শরীরে ম্যালেরিয়ার পরজীবীর বংবিস্তার হয়। আর কলকাতায় আবিষ্কার করেন কীভাবে সেই পরজীবী মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়। তিনি দেখলেন, মশা কামড়ালে তার শরীরের লালা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আর এভাবেই মশা থেকে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ম্যালেরিয়া। পাখির শরীরেও কীভাবে ম্যালেরিয়া ছড়ায়, তাও তিনি জানান। তাঁর মতে, কিউলেক্স মশার মাধ্যমে অ্যাভিয়ান ম্যালেরিয়া ছড়ায়। তবে তিনি কালাজ্বরের সংক্রমণের কারণ খুঁজতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর তিনি অসম চলে যান। এরপর ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সার্ভিসের কাজে ইস্তফা দেন। 

রোনাল্ড রসের নোবেল ঘিরে বিতর্ক (Controversy Over Ronald Ross Nobel Prize)। 

আশ্চর্যের বিষয় হল রসকে নোবেল দেওয়া হয় পাখির শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার জন্য। ঘটনা যে তিনিই প্রথম জানান কীভাবে মশার কামড়ে পাখিদের মধ্যে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। তবে পখির শরীরে ম্যালেরিয়ার জন্য নোবেল দেওয়া হলে তাঁর গবেষণাকে খাটো করা হতো। সে সময় ইতালীয় বিজ্ঞানী জিওভানি বাতিস্তা গ্রাসিও ম্যালেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। ১৯০২ সালে ঠিক হয়েছিল গ্রাসি এবং রস দু’জনকেই নোবেল দেওয়া হবে। তবে প্রভাব খাটিয়ে গ্রাসিকে হঠিয়ে দেন রস!  


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ